মোহাম্মাদ শামীম হুসাইন মীর্জা
হাওজা নিউজ বাংলা রিপোর্ট অনুযায়ী, মানুষ তার জীবদ্দশায় ছোট-বড় এবং ভালো-মন্দ কাজ করে থাকে। এসকল কাজের মধ্যে অধিকাংশ কাজেই মূল্যায়ন করা হয় না এবং শেষ পরিণতি সম্পর্কে তেমন মনোযোগ দেওয়া হয় না। কিন্তু মা’য়াদ বা কিয়ামতের নীতি অনুসারে, মানুষ একদিন তার কাজগুলি দেখবে এবং সে অনুযায়ী তার বিচার করা হবে।
রূহের হিসাবের ( কর্মের হিসাব) বিষয়টি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যা পবিত্র কুরআনের আয়াত ও হাদীসে বিবেচিত হয়েছে। পবিত্র কুরআনে বারবার জোর দিয়ে বলা হয়েছে যে, মানুষের কর্ম ও আচরণের মূল্যায়ন করা হয় মৃত্যুর পর। সে যতটুকু ভালো বা খারাপ কাজ করেছে তার জন্যও তাকে পুরস্কৃত বা শাস্তি দেওয়া হবে:
«فَمَنْ یَعْمَلْ مِثْقالَ ذَرَّةٍ خَیْراً یَرَهُ• وَ مَنْ یَعْمَلْ مِثْقالَ ذَرَّةٍ شَرّاً یَرَهُ»
সুতরাং কেউ অণু পরিমাণ সৎকর্ম করলে তা সে দেখবে এবং কেউ অণু পরিমাণ অসৎ কর্ম করলে তাও সে দেখবে।
সূরা যিলযাল, আয়াত ৭ ও ৮।
অবশ্য এটা এমন নয় যে, কোনো ব্যক্তি তার ভালো-মন্দ কাজের তালিকা দেখার জন্য মৃত্যুর অপেক্ষা করবে এবং তার পর তিনি পুরস্কার বা শাস্তি পাবে। বরং মানুষ এই পৃথিবীতে তার কর্ম ও আচরণের হিসাব করতে পারে এবং তার কর্মের প্রতি যত্নশীল হতে পারে। এ ব্যাপারে পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে:
«اقْرَأْ کِتابَکَ کَفی بِنَفْسِکَ الْیَوْمَ عَلَیْکَ حَسیباً»
এবং (তাকে বলা হবে), ‘তুমি তোমার গ্রন্থ পাঠ কর’; আজ তুমি নিজেই তোমার হিসাব গ্রহণের জন্য যথেষ্ট।
সূরা বনী ইসরাইল, আয়াত ১৪।
যারা এই পৃথিবীতে তাদের আচরণ এবং কথাবার্তা নিয়ন্ত্রণ করতে চায় এবং তাদের কর্মের হিসাব করতে চায়, তারা এই চারটি পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারেন:
প্রথম পদক্ষেপটি হচ্ছে “শর্ত”: অর্থাৎ যখন একজন ব্যক্তি ভোরে ঘুম থেকে জেগে ওঠে, তখন সে নিজের সাথে নিজে শর্ত করে যে, সেদিন কোন গুনাহ করবে না।
দ্বিতীয় পদক্ষেপ হচ্ছে “যত্নবান” হওয়া: অর্থাৎ দিনের বেলায় তার নিজের প্রতি এবং নিজ কর্মের প্রতি যত্নবান হতে হবে, যাতে সে কোন গুনাহ না করে।
তৃতীয় পদক্ষেপ হচ্ছে প্রাক্কলন বা হিসেব করা: অর্থাৎ রাতের শেষভাগে তার কাজ যাচাই করা উচিত, সে তার দায়িত্ব কতটুকু পালন করেছে এবং কতটুকু অবহেলা করেছে, তা নির্ণয় করে পরবর্তী দিনগুলোয় ভালো কাজগুলো অব্যাহত রাখবে এবং খারাপ কাজগুলো পরিহার করবে।
চতুর্থ পদক্ষেপ হচ্ছে শাস্তি দেওয়া: অর্থাৎ যদি কোনো ব্যক্তি দিনের বেলায় কোনো ভুল করে, তাহলে সেই ভুলের জন্য নিজেকে শাস্তি দেয়। যেমন: রোজা রেখে, কাউকে সাহায্য করে, কোন সৎকাজ করে, অথবা যদি সে কাউকে তার অধিকার থেকে বঞ্চিত করে, তাহলে সে তার নিকট ক্ষমা চেয়ে ক্ষতিপূরণ করতে পারে।
অবশ্য মানুষকে তার নিজ কর্ম এবং আচরণের প্রতি যত্নশীল হওয়ার পূর্বে নিজেকে, নিজের বিচার করতে হবে। আর এ জন্য প্রথমে তার খারাপ আচরণসমূহ সংশোধন করতে হবে এবং পরবর্তীতে সেই খারাপ আচরণের পুনরাবৃত্তি রোধ করাতে হবে।